চকরিয়ায় ১০ বছরের প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার উপহার

চকরিয়া প্রতিনিধি ◑ কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ১০বছরের জান্নাতুল রুজ্জু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। পৌরশহরের ৩নম্বর ওয়ার্ডের ফুলতলার পূর্ব বাটাখালী গ্রামের রাজমেন্ত্রী মোজাম্মেল হকের মেয়ে। মোজাম্মেল হক নিজে ও তাঁর আরেক কন্যাও শারীরিক প্রতিবন্ধী।

প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় অন্য শিশুদের মতো স্কুলেও যেতে পারেনি রুজ্জু। তাই তাঁর লেখাপড়া শুরু করা সম্ভব হয়নি। অনেকদিন ধরে মেয়ে রুজ্জুর জন্য স্বামীর কাছে একটি হুইল চেয়ারের অবদার ছিল মায়ের। কিন্তু অভাব অনটন ও টানাপোড়নের সংসারে যেভাবে বাবা মোজাম্মেল হক হিমসিম খাচ্ছেন, সেখানে মেয়ের জন্য একটি হুইল চেয়ার কেনার স্বপ্ন ছিল তাঁর কাছে একপ্রকার আকাশ-কুসুম কল্পনা।

এসময় কথাটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিস্ ফাইণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা আদনান রামীমের কানে আসে। তিনি পরিবারটিকে আশ^স্ত করলেন অতি দ্রুত সময়ে একটি হুইল চেয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। পরে কিছুদিন পর সংগঠক আদনান রামীম তাঁর প্রতিষ্ঠিত পিস্ ফাইণ্ডারে ব্যানারে হুইল চেয়ারটি ব্যবস্থা করে দেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কমর উদ্দিন আরমানের মাধ্যমে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শান্তা জাহান জান্নাতুল রুজ্জুর জন্য হুইল চেয়ারটি পাঠান।

২৬জুলাই বিকেল ৪টা। আনা হলো হুইল চেয়ার। জান্নাতুল রুজ্জু বাড়ির এক কোণে শুয়ে আছে। তাকে হুইল চেয়ারে বসানো হলো। যেন অনেকদিন পর রুজ্জু বাইরে পৃথিবীর আলো দেখছে। হুইল চেয়ার পেয়ে রুজ্জুর চোখে-মুখে ভেসে উঠল হাসির বন্যা। রুজ্জুর আনন্দ আর হাসিমাখা মুখে উপস্থিত সকলের চোখে তখন আনন্দ অশ্রু।

জান্নাতুল রুজ্জুর বাবা রাজমেন্ত্রী মোজাম্মেল হক অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘একটি মাত্র হুইল চেয়ারের অভাববোধ করেছে মেয়েটি। তাঁর প্রতিটি দিন কেটেছে অনেক কষ্টে। যারা আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ের সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেন তাদের সবাইকে আমার দরিদ্র পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক দোয়া।’

হুইল চেয়ার বিতরণের সময় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কমর উদ্দিন আরমান উপস্থিত থেকে পিস্ ফাইণ্ডারের এমন মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক আজিজুল হক, চকরিয়ার সনাক সদস্য জিয়া উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়স্থ চকরিয়া-পেকুয়া ছাত্র ফোরামে সাবেক সহ-সভাপতি শাহাদাত হোছাইন প্রমুখ।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিস্ ফাইণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা আদনান রামীম বলেন, ‘আমাদের মানবিকতা যদি সমাজের অসহায় মানুষের কাজে লাগাই তাহলে অল্পতেই ওই মানুষগুলোর মুখে হাসি দেখা সম্ভব। তেমনি রুজ্জুর মতো হুইল চেয়ার প্রদানের মাধ্যমে ৬০জন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে পিস্ ফাইণ্ডার। আমাদের একটি অনুরোধ থাকবে, অনেকে বাড়িতে পরিত্যক্ত হুইল চেয়ার পড়ে থাকে, সেইগুলো মানবতার কল্যাণে আমাদের কাছে দিতে পারবেন। তাহলে একটি হুইল চেয়ার দিয়ে অন্য একটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো সম্ভব।’

প্রসঙ্গত: স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পিস্ ফাইণ্ডারের প্রতিষ্ঠাতা আদনান রামীমের পিতা ২০১৪ সালে মৃত্যু বরণ করে। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর ব্যবহৃত হুইল চেয়ার দান করে ‘প্রজেক্ট হুইল চেয়ার’ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন সংগঠনটি। সেই কর্মসূচীতে সাড়া দিয়ে অনেকে এগিয়ে এসেছেন। এই পর্যন্ত দীর্ঘ ৬বছরে তাঁর আত্মীয় ও সংগঠনের সদস্য এবং বন্ধুবান্ধব শুভাকাঙ্খীদের সহযোগীতায় তিনি ৬০টি হুইল চেয়ার প্রতিবন্ধীদের নিকট বিতরণ করেছে।